প্রকাশ: ২০২০-০৪-২৭ ১৭:০৯:০৩ || আপডেট: ২০২০-০৪-২৭ ১৭:০৯:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনারভাইরাসের মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে যেন খাদ্য সংকটে পড়তে না হয় সে জন্য এক খণ্ড জমি কিংবা বাড়ির আঙিনাতেও ফসল ফলানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কেউ যেন এক টুকরো জমিও অযথা ফেলে না রাখে। সোমবার গণবভন থেকে রাজশাহীর আট জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় এ নির্দেশনা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দিতে পারে। আমাদের মাটি অন্তত উর্বর। আমাদের যাতে খাদ্য অসুবিধা না হয়। কাজেই যেখানে যে ফসল হওয়া যাবে, ধান কাটার পরপরই আমরা কোনো কোনো ফসল ফলাতে পারি। কেউ যাতে এতটুকু জমিও যাতে ফেলে না রাখে, একখণ্ড জমিও যাতে বাদ না যায়। তরিতরকারি, ফলমূল যা হোক সবকিছু উৎপাদন করা। নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় যা পারেন তা চাষ করবেন। যাতে করে করোনা মহামারী পরে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে তার থেকে আমাদের দেশকে বাঁচাতে পারি। শুধু এখানে না, কোনো দেশে যদি খাদ্য ঘাটতি থাকে তাহলে তাকে যেন আমরা সাহায্য করতে পারি। সেই জন্য আমাদের এখন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষিই একমাত্র যা মানুষকে বাঁচাতে পারবে। কারণ খাদ্যটা সবথেকে গুরুত্বর্পূণ। কারণ কথাই বলে পেটে গেলে পিঠে সহে।
করোনাভাইরাস অর্থনীতির উপর বিরাট ধাক্কা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সকল দেশে আমরা রপ্তানি করতাম সেইসব দেশগুলো করোনা কারণে বন্ধ। এখানে মানুষের নিরাপত্তাটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, করোনা হচ্ছে অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি। বাইরের মানুষের সঙ্গে যাতে কম মেশা যায় সেটা সবথেকে ভালো। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে মানুষকে এই রোগ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যা যা করার দরকার তা করে যাচ্ছি। আমাদের অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছি। ৩ হাজার ৯৬৪ চিকিত্সক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন করণীয় সম্পর্কে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাইরাস থেকে আমাদের সকলকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার থেকেই শুরু করে সকলেই প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে। আমি ধন্যবাদ জানাই আমার দেশবাসীকে, কারণ যখন আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম ঘরে থাকুন, তারা ঘরে থাকার চেষ্টা করেছেন, থেকেছেন। তবুও জীবন চলমান। জীবন জীবিকার জন্য মানুষকে বাহিরে যেতে হয়। তারপরও তাদের এই কষ্ট দূর করার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে খাবার যেন পৌঁছে যায় তার চেষ্টা যেমন আমরা করেছি। তাছাড়া আমাদের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন আমাদের খুলনায় একজন চিকিত্সক করোনা ভাইরাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শারীরিক অবস্থা যখন খারাপ হয় আমরা হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিত্সার ব্যবস্থা করেছি। ডাক্তার মাসুদ তার নাম। অর্থাত্ আমাদের যারা সেবা ও চিকিত্সা দিচ্ছে তাদের ভালোমন্দের দিকেও আমরা নজর দিচ্ছি। তারা যাতে সুরক্ষিত থাকে তার জন্য যা যা লাগে তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই সকলেই সুরক্ষিত থাকুক। তাই সকলেই যাতে সবসময়ই মাস্ক পরে থাকেন।
এ সময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য মাত্র দুই শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। আর যারা ইতিমধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে কি করা যায় সেটা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় কথা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। আমাদের জীবন জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা। তাই যেসব জায়গায় এখনও করোনাভাইরাস তেমন দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে আমরা সেইসব জায়গাগুলো ধীরে ধীরে শিথিল করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। সেইদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক খামারি পোল্ট্রি পণ্য নষ্ট করেছেন, মুরগির বাচ্চা মেরে ফেলেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেহেতু হোটেলসহ সবকিছু বন্ধ তাই পোল্ট্রি ডেইরি, দুধ এগুলো অল্প টাকায় আপনারা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে দেন। সবাই খেতে থাকুক। বা দুধ দিয়ে ঘি বা অন্যান্য যা যা দরকার তা তৈরি করে রাখেন। যেটা বহুদিন যাবত টিকে থাকবে। ফেলে না দিয়ে সেটা যথাযথভাবে কাজে লাগান। মানুষকে বিলিয়ে দিলেওতো কাজে লাগে। সেটা অনেকই দিচ্ছেন।