প্রকাশ: ২০২১-০১-২৮ ১৫:৩৩:১৮ || আপডেট: ২০২১-০১-২৮ ১৫:৩৩:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক::
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পেল নতুন নগরপিতা। বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে পরাজিত করেন।
দফায় দফায় সংঘর্ষ। কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না দেওয়া— এমন অভিযোগসহ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ-সহিংসতার মধ্যে দিয়ে সাঙ্গ হলো চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন। এতে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী রেজাউল পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। আর ধানের শীষ নিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন ভোট পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯টি। ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ ভোটের মধ্যে শতকরা হারে ভোটগ্রহণ হয়েছে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ভোটের ফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ৭৩৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। তবে ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনায় স্থগিত করা হয় দুটি কেন্দ্রের ভোট।
ব্রিটিশ আমলে গঠিত চট্টগ্রাম পৌর করপোরেশন ১৯৮৯ সালে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হয়। এরপর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
১৯৯১-১৯৯৩ মেয়াদে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র পদে ছিলেন বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর টানা তিনবার তিনি ভোটে লড়ে জয়ী হন। ২০১০ সালে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটে পরাজিত হন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপরের ভোটে মনজুরকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন। এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় রেজাউল করিম চৌধুরীকে।
নান্দনিক নগরী গড়ে চট্টগ্রামবাসীর সেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া রেজাউল করিম পর্যটন রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করেছেন।
জলাবদ্ধতা নিরসন, ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নগরীর সবচেয়ে বড় সংকট জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমত বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার কথাও বলেন রেজাউল।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সব মতের মানুষের মতামত নিয়ে অতীতকে ফেলে নতুনের দিকে এগোতে চাই। সবার সাথে পরামর্শ করে সবার মেধাকে কাজে লাগাব। সেই পরামর্শ যদি মানুষের উপকারের হয়, টেকসই হয়, বাস্তবায়নযোগ্য হয় তাহলে সব কাজে লাগাব।
নগরীর পূর্ব ষোলশহরের বহদ্দার বাড়ির সন্তান রেজাউল করিম ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম দুঃসময়ে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন রেজাউল। এরপর হন যুবলীগের সদস্য। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন রেজাউল। এরপর হন সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমান কমিটিতে তিনি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদকের পদে আছেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল।
লেখক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে রেজাউলের। ‘ছাত্রলীগ ষাটের দশক চট্টগ্রাম’ এবং ‘স্বদেশের রাজনীতি ও ঘরের শত্রু বিভীষণ’ নামে দুটি বই রয়েছে তার।