বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ১৬ নম্বরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

প্রকাশ: ২০২০-০৩-০২ ১৬:৩০:৪৫ || আপডেট: ২০২০-০৩-০২ ১৬:৩০:৪৫

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলা একটি ‘শ্রোতা জরিপ’-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিল – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত। সোমবার (২ মার্চ) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় ১৬তম স্থানে আসেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। আজ তাঁর জীবন-কথা।

শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সর্বপ্রথম যুক্তি-তর্ক দিয়ে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বিবেচিত করার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাগরণ এবং বাঙালির চেতনা বিকাশের অগ্রদূত হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ২৪ পরগণার পেয়ারা গ্রামে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জুলাই। তাঁর জীবদ্দশায় বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। তাঁকে বলা হতো ‘চলন্ত এনসাইক্লোপেডিয়া’। বিভিন্ন ভাষার প্রতি ছোটবেলা থেকেই ছিল তাঁর অদম্য আগ্রহ।

তাঁর চতুর্থ পুত্র মুহম্মদ তকিউল্লাহ জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করার পর ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে যান। কলকাতা মাদরাসার একটি ইউনিট তখন প্রেসিডেন্সি কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেখান থেকে এফ.এ. (বর্তমান এইচএসসি সমমান) পাস করার পর ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর তিনি এম.এ. এবং আইন পড়েন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট লাভ করেন।’

ডক্টরেট শেষ করার আগেই তিনি গবেষণার কাজ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনার কাজ করেন ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাংলা ও সংস্কৃতের অধ্যাপক ও রিডারের দায়িত্ব পালন করেন।

মুহম্মদ তকিউল্লাহ জানান, ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কয়েকবছর বগুড়া কলেজে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করার পর ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আবার ফিরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং সেখান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান ১৯৫৮/৫৯ পর্যন্ত। তিনি করাচিতে ঊর্দু অভিধান বোর্ডের প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে তিনি প্রফেসর এমিরেটাস হন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রফেসর এমিরেটাস।

তাঁর জীবদ্দশায় বহু ভাষা শিখেছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান তৈরি করে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। বাংলা অ্যাকাডেমির ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক পদেও কাজ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও বাংলা অ্যাকাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি হিসাবে তাঁর নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়।

এই অনুষ্ঠানমালা তৈরির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন আবুল কালাম মঞ্জুল মোরশেদ। তিনি বলেন এম.এ পাস করার পর জার্মানিতে গিয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সেখানে জার্মান, ফরাসিসহ বেশ কয়েকটি ইওরোপীয় ভাষাও শিখেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে থাকাকালীন বাংলা ভাষার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি, হিন্দি, ঊর্দু, আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষতা লাভ করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীকালে যে কাজটির জন্য তিনি অসামান্য কৃতিত্বের দাবিদার হয়ে ওঠেন, সেটা হল বাংলা একাডেমি থেকে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান বের করার পরিকল্পনা। আমার মনে হয়, শুধু তখন কেন, এখনও এমন কোন ব্যক্তি নেই, যিনি এই কাজটি করতে পারতেন। তাঁকে যখন এই কাজটি দেয়া হলো, তখন মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় বিশাল একটি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান তৈরি হয়েছিল।’

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি লেখার মধ্যে দিয়ে, যেটা মুহম্মদ তকিউল্লাহ মনে করেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা।

‘কমরেড পত্রিকায় একটি লেখা তিনি লেখেন, ‘দ্য ল্যাঙ্গোয়েজ প্রবলেম অফ পাকিস্তান’। এই নিবন্ধে যে কথাগুলো তিনি বলেন, সেগুলো হচ্ছে এই যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাংলাভাষী অংশে, যদি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা রাষ্ট্রভাষা হয়, তাহলে সেই স্বাধীনতা হবে পরাধীনতারই নামান্তর। একথা তিনি বলেন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের তেসরা অগাস্ট অর্থাৎ ১৪ই অগাস্টের এগারোদিন আগে,’ বলেন মি. তকিউল্লাহ।

‘এই কথাটাই দেশে তখনকার বাঙালি সুধীসমাজ লুফে নেন। এবং এই কথাটার উপরই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা।’

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন আবুল কালাম মঞ্জুল মোরশেদ। তিনি বলেন, ‘তিনি বাংলা ভাষার ইতিহাস দু খণ্ডে লিখেছিলেন। একসময় বিদ্যাপতির যে পদগুলো ছিল, সেগুলো সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। এবং তাঁর একটি বিরাট কৃতিত্ব হচ্ছে প্রাচীন বাংলার যে প্রথম নিদর্শন – চর্যাপদ, সেই চর্যাপদ তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। কাজেই একদিকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, অন্যদিকে গবেষণা এবং আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সম্পাদনা- এই দিকগুলো যদি আমরা বিচার করি, তাহলে আমরা দেখব প্রতিভার বৈচিত্র্যে তিনি কত অসামান্য ব্যক্তি ছিলেন।’

বহুভাষাবিদ, বিশিষ্ট শিক্ষক ও দার্শনিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মারা যান ১৩ই জুলাই ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে। গবেষকরা মনে করেন তাঁর ৭৪ বছরের জীবনে তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি বাঙালি জাতিকে বাংলা ভাষা এবং বাংলা ভাষার রচনাকে ভালবাসতে শিখিয়ে গেছেন।

প্রাচ্যের অন্যতম সেরা এই ভাষাবিজ্ঞানী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং ভূমিকা রেখেছিলেন, তার ফলেই এই ভূখণ্ডে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানি প্রশস্ত হয় বলে মনে করেন ভাষা বিষয়ক গবেষকরা।-বিবিসি

ক্যালেন্ডার এবং আর্কাইভ

SunMonTueWedThuFriSat
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
   1234
19202122232425
262728293031 
       
293031    
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031