প্রকাশ: ২০২০-০৫-২১ ১৬:৫৫:৩৪ || আপডেট: ২০২০-০৫-২১ ১৬:৫৫:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারারাত তাণ্ডবের পর গতি কমে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের বাতাসের গতিবেগ এখন ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল পারি দিয়ে এটি এখন স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তরদিকে (রাজশাহী অঞ্চল) সরছে। আম্পান এখন ঘূর্ণিঝড় না থাকায় দেশের নদী ও সমুদ্র উপকূল অঞ্চলের জন্য মহাবিপদ সংকেত নামানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আম্পান ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারাবে। তবে এর প্রভাবে আজ সারাদেশেই ঝড়-বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৬০ থেকৈ ৮০ কিলোমিটার বেগেও ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার পর এটি রাজশাহীতে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট উইনডি ডটকমের তথ্যমতে, সকাল ১০টার দিকে নিম্নচাপটি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছিল।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদ বলেন, আম্পান এখন রাজশাহী অঞ্চলে আছে। এটা এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে আছে। আমরা কেবলই এটাকে নিম্নচাপ হিসেবে ইস্যু করলাম। সুতরাং এর কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত এটা ঘূর্ণিঝড় রূপেই ছিল।
আম্পান উপকূল অতিক্রম করার পর সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা এসব অঞ্চল অতিক্রম করে রাজশাহীতে অবস্থান করছিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্থল নিম্নচাপ রূপে।
এদিকে আম্পান স্থলভাগে উঠে যাওয়ায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত তুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ- হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তবে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের আধিক্য বিরাজ করছে। সাগর এখন উত্তাল। এ কারণে মহা বিপদ সংকেত নামানো হলেও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জন্য সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
গতকাল রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের প্রভাবে দেশের পাঁচ জেলায় ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ঘণ্টা চারেকের তুমুল ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকা।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আসল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। বহু গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে, শত শত গাছ উপড়ে গিয়েছে এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, আম্পানের মূল অংশ অর্থাৎ কেন্দ্র ভারতের মধ্য দিয়েই যাওয়ার কারণেই প্রথম দিকের ঝড়ের যে তীব্র গতি সেই ধাক্কা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায়নি।। কিন্তু এর ব্যাস বড় হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের একেবারে কাছাকাছি খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রথমে ঝড়ের তীব্রতা দেখা যায়। একইসঙ্গে প্রায় সারা দেশের ওপর দিকে দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর রাত যত বাড়তে থাকে, আম্পান উপকূল থেকে তত ওপরে স্থলভাগের দিকে উঠতে থাকে।