প্রকাশ: ২০২০-০৬-০৮ ১০:৪৪:৩১ || আপডেট: ২০২০-০৬-০৮ ১০:৪৪:৩১
নিজস্ব প্রতিনিধি::
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অবিলম্বে চট্টগ্রামকে ‘রেড জোন’ এর আওতায় এনে লকডাউন ঘোষণা করে একমাস কারফিউ জারি করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতারা।
রোববার (৭ জুন) দুপুরে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে দিন দিন করোনা সংক্রমিত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে বর্তমানে রাজধানী ঢাকার পরে চট্টগ্রামের অবস্থান। বাংলাদেশ এখন সংক্রমনের দিক দিয়ে শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু এই বন্দর নগরীতে প্রায় ৬০ লক্ষ লোকের বসবাস। বর্তমানে করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের কারণে এই শহরের সাধারণ জনগণ অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে ৩টি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা করলেও বিশাল জনগোষ্ঠির তুলনায় এই আয়োজন অত্যন্ত অপ্রতুল। করোনা রোগীর জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ, অক্সিজেন, সিলিন্ডার ও বেডের ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার জন্য মানুষ এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছেনা। চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে এখন মৃত্যু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা জাহিদুল করিম কচি, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এস.এম. সাইফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামরুল ইসলাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, লকডাউনসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির যখন উন্নতি ঘটছে তখন আমাদের দেশে ভয়াবহ আকারে অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে কাতরাচ্ছে করোনা রোগীরা এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। টেস্টের অনুপাতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সব দেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা মানুষের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। অনির্বাচিত সরকারের কাছে জনগণের জীবনের কোন মূল্য নেই। অবিবেচকের মতো সবকিছু খুলে দিয়ে এখন তামাশা দেখছে সরকার। প্রতিদিন সরকারীভাবে করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তারচেয়েও অনেক বেশী। অনেক মানুষ আক্রান্ত হলেও গণনার বাইরে রয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা করোনায় ভঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিরসন করে বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীকে পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে ১২ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রস্তাবনাগুলো হলো- চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট কভিড হাসপাতালে উন্নীত করে মেডিক্যালের মাঠে একটি আধুনিক ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা। চট্টগ্রামের ৬টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোকে দ্রুত কভিড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা। চট্টগ্রামের বন্দর হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল ও কর্পোরেট ইম্পেরিয়াল হাসপাতালকে পরিপূর্ণ কভিড হাসপাতাল হিসেবে অতিদ্রুত করোনা চিকিৎসার উপযোগী করে তোলা। যেসব বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে আইসিইউ সুবিধা আছে সেগুলো সরকার অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসার সুবিধার্থে ক্লিনিক মালিকদের সাথে বসে ডাক্তার ও কর্মচারীদের উপযুক্ত সম্মানী বাবদ মাসিক বাজেট প্রদান করার দাবি জানান।
এ ছাড়া করোনার সংক্রমণ রোধ করতে আঞ্চলিকভাবে ‘চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স’ গঠন করে রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠে দলমত নির্বিশেষে রাজনীতিবীদ, পেশাজীবী, সেবাপ্রদানকারী সংস্থার প্রধান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন বিএনপি নেতারা।