বাংলাদেশ, , বুধবার, ১ মে ২০২৪

ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস রাখুন, আমরা হারবো না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২০২০-০৩-৩০ ০০:০২:০৩ || আপডেট: ২০২০-০৩-৩০ ০০:০২:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট সবাইকে ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাঙালি কখনো হারেনি, আত্মবিশ্বাস থাকলে এই সংকটেও হারবে না। তার সরকার সবকিছু দিয়ে জনগণের পাশে আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

রবিবার বিকালে গণভবনে এক অনির্ধারিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। এদিন করোনার সংকট মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের সমপরিমাণ বেতনের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দান করা হয়। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে করোনা সংকট মোকাবেলায় অর্থ সহায়তা দেয়া হয়।

অতীতের বিভিন্ন মহামারির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত বছর পরপর এমন একটা মহামারি পৃথিবীতে আসে। অতীতে যেহেতু প্রযুক্তির ব্যবহার এত ছিল না, কাজেই কোন দেশে, কোন অঞ্চলে, কোথায় কী ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা জানার সুযোগ ছিল না। বর্তমানে বিশ্বটা গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে গেছে, কোথাও একটা ঘটনা ঘটলে আমরা গণমাধ্যমের কারণে সব ঘটনাই জানতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, চীনের উহানে যখনই এই ঘটনা ঘটেছিল তখনই আমরা সেখান থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে এনেছি। তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। আমরা শুধু তাদের কোয়ারেন্টাইনে রেখেই ক্ষ্যান্ত হইনি, সাথে সাথে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করা। এটা প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা একটার পরে একটা নিয়ে নিয়েছি। বিশেষ করে আমরা দেশের মানুষকে সচেতন রাখতে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়। মানুষ যাতে আর্থিকভাবে কষ্টে না পড়ে সেই দিকটাও সচেতন থেকেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি পদক্ষেপ অন্তত পরিকল্পিতভাবেভাবে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে সেটাই নিয়েছি। বলতে গেলে জানুয়ারি মাস থেকেই আমাদের পদক্ষেপগুলো চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা পর্যায় যখন এলো তখন আমরা সবাইকে ছুটি দিয়েছি। কিন্তু ছুটি মানে এই না সবাই কাজ ছেড়ে ঘরে বসে থাকবে। যার কাজ করতে পারবে, ঘরে বসেই কাজ করবে। কিন্তু মানুষের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশে কিছু বিদেশিরা চলে আসছিল, যার ফলে প্রবাসীরা আসার ফলে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিল। কোন কোন জায়গায় দেখা দিল তা আমরা সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিয়েছি। এর বিস্তার ঠেকাতে আমরা সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছি। এবং সেটা অব্যাহত রাখছি। সকলকে বলবো ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরে বেড়াবেন, এটাতো হয় না।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেয়া অনুদান সরাসরি গ্রহণ করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করেন। বলেন, আমি ভিডিও কনফারেন্সে আছি, আমার পক্ষ থেকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তা গ্রহণ করছেন। এটা আমার কাছে খারাপও লাগছে কারণ আপনাদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করতে পারলাম না। কারণ এটার আরেকটা কারণ হচ্ছে আমি নিজেই যদি না মানি তাহলে অপরকে মানতে বলবো কীভাবে? কারণ যেহেতু সবাইকে বলছি দূরত্ব বজায় রাখতে, ঘরে থাকতে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এই সময়টাও পার করতে পারবো। আমাদের শিল্প কারখানার মালিক-শ্রমিকরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানে চালাতে পারবে। কিন্তু সেখানে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ যারা কাজ করবে তাদের সুরক্ষিত রেখেই চালাতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সকলের কাছে আহ্বান আপনারা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। সৃষ্টিকর্তাই পারে। কারণ আমরা দেখি যে শত বছর পরে এই ধরনের মহামারি আসে কেন? কাজেই একমাত্র নিজেরা সুরক্ষিত থাকা, আশেপাশে যারা অছেন তাদের সুরক্ষিত রাখা। এবং সেই সাথে সাথে মানুষের ক্ষতি যত কম হয়, ক্ষতি যেন একেবারেই না হয় সেটার জন্য ব্যবস্থা নেয়া। তা আমাদের নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কষ্টে থাকে খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, সাধারণ নিম্নবিত্ত। অনেকেই আছেন যারা তাদের ব্যবস্থা এমন না যে তারা অনেক কিছু জমিয়ে রাখতে পারবেন, দিনের পর দিন চলতে পারবেন। কর্মসংস্থান থাকার ফলে তাকে খেয়েপরে চলতে পারলেও কিন্তু বর্তমানে এই অবস্থা চলার ফলে তারা সত্যিই খুব কষ্টে আছেন। ইতিমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খাদ্যশস্য আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তা পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে। পাশাপাশি ভিজিএফসহ যেসকল আর্থিক সহায়তা আমরা দিয়ে থাকি তা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সড়ক ও নৌপরিবহন যেহেতু বন্ধ, তাই তাদের শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। তারা ঘরে বসা। খাবার কিনে মজুদ করার মতো অবস্থা তাদের নাই। এই শ্রেণির মানুষের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাদের তালিকা করে, আমাদের খাদ্যশস্য যা যা প্রয়োজন তা পৌঁছিয়ে দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ও নার্সদেরর সুরক্ষিত করা দরকার । সেই বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এরই মধ্যে আমরা সরকারিভাবে কাজ করছি। আবার কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সহযোগিতা করছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিচ্ছেন। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সকলকেও সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সুরক্ষার পোশাক দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে খাদ্য পৌঁছিয়ে দেয়া একান্তভাবে জরুরি। প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী হতে শুরু করে যা যা প্রয়োজন তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আমাদের তালিকা তৈরি করা আছে, আরও তালিকা করা দরকার। কারণ মানুষকে ঘরে আটকে রাখলেই হবে না, তাদের খাদ্য ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আমাদের করে দিতে হবে।

সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের একদিনের বেতন প্রদান ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো সাহস ও শক্তি আমাদের আছে, আমি বিশ্বাস করি। এই অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। যাতে করে দেশের প্রতিটি জনগণকে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ আমাদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছেন। আমরা সেই সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৃষকদের ফসল ফলাতে হবে। পাশাপাশি অনেকই গ্রামে চলে গেছে, তাদের যার যেখানে যতটুকু জমি আছি, এতটুকু জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন ফসল ফলাবেন। কারণ বিশ্বব্যাপী যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ব্যাপকভাবে খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। আমাদের সুবিধা হলো, বাংলাদেশের মাটি ঊর্বর, মানুষ কর্মঠ। মাটি ও মানুষ মিলে যদি পরিশ্রম করতে পারি তাহলে আমরা নিজেদের খাদ্যের পাশাপাশি অন্যকেও আমরা সহযোগিতা করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো আমরা খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছি। যাতে ওষুধ উৎপাদনটা থাকে। পাশাপাশি পিপিই যা দরকার তা উৎপাদন শুরু হয়েছে। আরও উৎপাদন করা দরকার। আমাদের কাছ থেকে যারা সহযোগিতা চেয়েছে তাদেরর সহযোগিতা করতে পারবো। তার সক্ষমতা আমাদের আছে। মানবিক কারণেই আমরা করবো। নিজেদের পাশাপাশি অন্য দেশেরও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা সেইদিকে দৃষ্টি দিবো।

শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি কখনো হারেনি। আমরা হারবো না। এই আত্মবিশ্বাস সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। শুধু নিজেকে একটু সুরক্ষিত রাখতে হবে। আর অপরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে।

ক্যালেন্ডার এবং আর্কাইভ

SunMonTueWedThuFriSat
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031     
   1234
19202122232425
262728293031 
       
293031    
       
      1
2345678
9101112131415
16171819202122
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031    
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031